শনি. মে ১৮, ২০২৪

বাগেরহাট প্রতিনিধি,
সন্তানের কাছে মা-বাবার চাওয়ার কিছু থাকে না। তারপরও সন্তানদের কাছ থেকে কোন কিছু পাওয়ার যে আনন্দ তার শেষ নেই। সন্তান কাছে না থাকলেও, সুখে আছে এতে আমাদের শান্তি। তবে প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন আমাদের যে ভবন তৈরি করে দিয়েছে এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গতকাল দুপুরে আরম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে কেক কেটে ছেলের করে দেওয়া মালয়েশিয়া ভিলা উদ্বোধন শেষে এমন কথা জানান প্রবাসী জাহাঙ্গীরের বাবা রুস্তুম আলী হাওলাদার ও মা ফরিদা বেগম। এসময় প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানসহ উপস্থিত সকলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বাবা-মায়ের জন্য মালয়েশিয়া ভিলা নির্মান করা জাহাঙ্গীর হাওলাদার মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী এলাকার রুস্তুম আলী হাওলাদারের ছেলে। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এলাকাতেই বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য শুরু করেন। তবে ব্যবসায় লোকসান ও মানুষের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে, পনের বছর আগে পারি জমান মালয়েশিয়া। প্রথমে দুই বছর চাকুরী করে নিজে ব্যবসা শুরু করেন প্রবাসে। পরবর্তীতে নিজের আপন ছোট দুই ভাইকে বিদেশে পাঠান। তিন ভাই-ই এখন রেমিটেন্স যোদ্ধা। নিজেরা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আত্মীয় স্বজন ও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
বাবা-মায়ের খুশির জন্য বাগেরহাট সদর উপজেলার বৈটপুর নামক স্থানে মালয়েশিয়া ভবন নামের একটি পাকা বাড়ি নির্মান করেছেন। বাবা-মাকে দেওয়া উপহারের ভবন তাদের দিয়েই উদ্বোধন করিয়েছেন প্রবাসী ছেলেরা। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেদের কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে খুশি বৃদ্ধ বাবা-মা ও অন্যান্য স্বজনরা।
প্রবাসী জাহাঙ্গীরের বাবা রুস্তুম আলী হাওলাদার বলেন, বাবা হিসেবে ছেলেদের জন্য সব সময় দোয়া করি। ছেলেরাও আমাকে অনেক ভালবাসে। কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয় না। সুসজ্জিত এই ভবনে এসে আমার প্রান জুড়িয়ে গেছে। কখনও ভাবিনি এরকম একটি ভবনে থাকতে পারব। সমাজের অন্য সন্তানরা যদি তাদের বাবা-মাকে ভালবাসেন এবং দায়িত্ব পালন করেন তাহলে আর বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হবে না।
জাহাঙ্গীর হাওলাদারের মা ফরিদা বেগম বলেন, আজ আমাদের অনেক আনন্দের দিন। কিন্তু সন্তানরা কাছে নেই। তারপরও আমার জাহাঙ্গীরের ছেলে-মেয়ে ও বউকে নিয়ে এই বাড়িতে উঠতে পেরেছি এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। দোয়া করি আমার ছেলেরা সব সময় ভাল থাকুক।
প্রতিবেশী মোঃ হারুণ বলেন, এই বাড়িতে এসে একটি ব্যতিক্রম বিষয় দেখলাম। প্রবাসীরা সাধারণত নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু প্রবাসী জাহাঙ্গীর নিজে এলাকায় না এসেও, বাবা-মায়ের জন্য ভবন করেছেন এটা সমাজের জন্য অনুকরনীয় হত পারে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রবাসী জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, আমার দুই সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজন-ই আমার আপনজন। আমি ভাল থাকব, আর আমার আপনজনরা কষ্টে থাকবে, এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। প্রবাসে এসে টাকা আয় করার শুরু থেকেই চেয়েছি বাবা-মাসহ সবাইকে ভাল রাখতে। ভবন কিছুই না, আমি চাই আমার বাবা-মাসহ স্বজনরা সব সময় ভাল থকুক।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মিস শিউলি বেগম বলেন, আমার ছেলে পলাশ হাওলাদার ও মেয়ে ফাতেমা আক্তার লিমাকে যেমন আদর করি, আমার শ্বশুর-শাশুরীকে তেমনি আদর-সম্মান করি। সব সময় চেষ্টা করি, তাদের কোন সমস্যা না হয়। তারা কষ্ট পায় এমন কোন কাজ করি না। দোয়া করি আল্লাহ তাদের দীর্ঘজীবি করুণ।
বাগেরহাট শহরতলীর দরাটানা সেতুর সন্নিকটে করা একতলা মালয়েশিয়া ভবনে আটটি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কক্ষে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা।#al

 

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *