শুক্র. মে ৩, ২০২৪

বাগেরহাট অফিস.
টানা ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে সাগরে ছুটছেন বাগেরহাটের জেলেরা। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রাত ১২টার পরেই জেলার বাগেরহাট কেবি বাজার, কচুয়ার বগা, মোংলার জয়মনির ঘোল, মামার ঘাট, রামপালের শিকিরডাঙ্গা, শ্রীফলতলা, খেয়াঘাট, শরণখোলা রায়েন্দা, সাউথখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন কয়েক হাজার জেলে।
নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ মাছের পাশাপাশি একই সময়ে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫ হাজারের অধিক জেলে শুটকি আহরণে রওনা দিয়েছেন। এসব জেলেরা সুন্দরবনের দুবলার চর, মাঝের কিল্লা, মেহের আলীর চর, নারকেল বাড়িয়া ও শেলার চরে প্রায় ৬ মাস অবস্থান করে শুটকি আহরণ করবেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এবার অন্তত ১২ হাজার নিবন্ধিত ইলিশ জেলে সাগরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশের সঙ্গে অন্যান্য মাছও বেশি করে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সমুদ্রগামী জেলেরা।
সাগরে মাছ ধরকে যাওয়া কচুয়া উডপজেলারবগা গ্রামের ইউনুস শেখ বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর আর্থিকভাবে অনেক সমস্যার মধ্যে ছিলাম। আল্লাহর নাম নিয়ে এখন মাছ ধরতে সাগরে যাচ্ছি, আশা করি এবার মাছ ভালো পাওয়া যাবে।
একই গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরে সাগরে মাছ ধরি। আগে তেমন নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কয়েক বছর ধরে মাঝে মাঝেই নিষেদ্ধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয় আমাদের। এই সময়ে সরকার আমাদের সামান্য চাল দেয়, যাতে সংসার চলে না। সাগরে মাছ ধরার কারণে নিষেধাজ্ঞার সময়ে স্থানীয় কেউ কাজেও নেয় না। এই সময়ে চালের সঙ্গে সরকার যদি আমাদের কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমাদের মতো জেলেদের সংসার ভালোভাবে চলত।
সমুদ্রগামী জেলে পল্লীর সভাপতি শহিদ মল্লিক বলেন, জীবনের ঝুঁকি, ঋণের বোঝাসহ নানান শঙ্কার মধ্যে দিয়ে সাগরে মাছ আহরণ করি আমরা। অবরোধ চলাকালীন সময়ে ধার দেনা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে, পাশাপাশি জাল, দড়িসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে বেশ খরচ করতে হয় আমাদের। এসবের জন্য সরকারি সহায়তা এবং সুদমুক্ত ঋণের দাবি করেন সমুদ্রগামী জেলেদের এই নেতা।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলায় ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত ১২ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ১২ হাজার ইলিশ জেলেসহ জেলায় মোট ৩২ হাজার ৬৯৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। নিবন্ধিত মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে প্রায় ৫০০ টির বেশি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় এই ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেদ্ধাজ্ঞা ছিল। এই সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশের আকার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাষ্ট্রের যেমন লাভ হবে, তেমনি জেলেরাও লাভবান হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *