বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশেরই ভ্যাকসিন নেয়া ছিল না,
দ্বিতীয় ঢেউয়ে উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে দেড়শ’র উপরে মৃত্যু ,মৃতদের ৯৫ শতাংশই ছিলেন ভ্যাকসিনের বাইরে দাবি স্বাস্থ্যবিভাগের।
বাগেরহাটে গত তিন মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গত দুই মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। এসময়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ শতাংশেরই করোনা ভ্যাকসিন নেয়া ছিল না। ভ্যাকসিন নেয়াদের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অনেক কম ছিল বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। ও গত দুই সপ্তাহ ধরে বাগেরহাটে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমের দিকে। বর্তমানে জেলায় সংক্রমণের গড় হার ২৩ শতাংশ থেকে ত্রিশ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। যা আগে ছিল ৫৬ শতাংশের উপরে। তবে এই হারও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ৩০ মে জেলার মোংলা উপজেলা থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করে। এরপর আশেপাশের উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণের হ্রাস টানতে কয়েক দফা কঠোর বিধিনিষেধ দিতে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।
বাগেরহাট প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে এপর্যন্ত ৬ হাজার ৩২৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৫ হাজার ৪৮১ জন সুস্থ হয়েছেন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩০ জন।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, গত জুন মাস থেকে বাগেরহাট জেলায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই সময়ে বেশ কয়েকটি উপজেলায় সংক্রমণের হার ৭২ থেকে ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সারা জেলায় সংক্রমণের গড় হার ওঠে ৫৬ শতাংশ। সংক্রমণ কমাতে লকডাউন দিয়ে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে সংক্রমণের হার কিছুটা কমে আসছে। এখন সংক্রমণের হার ২৫ থেকে ২৬ শতাংশের মধ্যে থাকছে। তবে এই হারও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণটা কমে আসবে। গত দুই মাসে ৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চাপও অনেক বেড়ে যায়। ৫০ শয্যার বিপরীতে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকছিল। এখন তা কমে এসেছে। আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ও হাসপাতালে ভর্তি সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জন রোগীর ভ্যাকসিন নেয়া ছিল না। যার কারনে তাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। আর যাদের ভ্যাকসিন দেয়া ছিল তারা অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যারা ভ্যাকসিন নেননি তাদের মধ্যে মৃত্যুহারও বেশি ছিল। যেখানে প্রথম ঢেউয়ে জেলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের সেখানে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত তিন মাসে মৃত্যু হয়েছে একশ চারজনের।
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাটে নিয়মিত ভ্যকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। সব উপজেলাগুলোতে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৪২ হাজার জনকে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দিতে পেরেছি। আর ৯৮ হাজার ৭২৫ জনকে প্রথম ডোজ দিয়েছি। শহরের মানুষ ভ্যাকসিন সহজে নিতে পারছেন। গ্রামের মানুষ ইচ্ছা থাকলেও বয়স্ক নারীরা ভ্যাকসিন নিতে পারছেন না। তাদের কথা চিন্তা করে সরকার গ্রামের মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে একদিনে ৮১টি কেন্দ্রে ৪৪ হাজার ৪৬৮ জনকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে যা প্রমাণিত। এরমধ্যে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের শরীরে গুরুতর কোন অসুবিধা হয়নি। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য, দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এখন যেহেতু বাড়ির দোরগোড়ায় ভ্যাকসিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাই সবাইকে নিবন্ধন করে ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, গত মে মাস থেকে বাগেরহাট করোনা ভাইরাসের হটস্পট হয়ে ওঠে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকে। যা প্রশাসনসহ স্থানীয় সচেতনদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। ওই সময়ে সংক্রমণের হ্রাস টানতে কঠোর বিধিনিষেধসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে জেলায় প্রচার প্রচারণা, জরিমানা ও কারাদন্ডের মত কঠোর শাস্তির দিকেও যেতে হয়েছে প্রশাসনকে। ৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে ৫০ শয্যার বিপরীতে ৭০ জন রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চাপ কমেছে। গত তিন সপ্তাহের মত হলো সংক্রমণের হার কমের দিকে যেতে শুরু করেছে। সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। তাই সবাই সচেতন হই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। বাগেরহাটে করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।