বাগেরহাট প্রতিনিধি,
সুন্দরবন দুবলার চরে আগামী ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অর্থাৎ রাস উৎসবের সময় নির্ধারণ করা হয়। রাস উৎসবে ভক্ত-দর্শনার্থীদের পাঁচটি রুটে যাওয়া-আসা করতে হবে।
রবিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সভাপতিত্ব করেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন। প্রস্তুতি সভা থেকে জানা গেছে, তিন দিনব্যাপী রাস উৎসবে ভক্ত-দর্শনার্থীদের যাওয়া-আসা নিবিঘর্œ করতে পাঁচটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।
রুটগুলো হলো, ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন-ত্রিকোনা আইল্যান্ড-বলার চর-আলোরকোল, বগী-বলেশ্বর-সুপতি ষ্টেশন-কচিখালী-শেলারচর-দুবলার চর-আলোরকোল, বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক-বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল-হংসরাজ নদী-দুবলার চর-আলোরকোল, কয়রা-কাশিয়াবাদ-খাসিটানা-বজবজা-আড়ুয়া শিবসা-শিবসানদী-মরজাত-দুবলার চর-আলোরকোল, নলিয়ান ষ্টেশন-শিবসা-মরজাত নদী-দুবলার চর-আলোরকোল।
এই পাঁচটি রুটে যাওয়া-আসা করতে হবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। এছাড়া এবার রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে রাসপূজা ও পুণ্যস্নান হবে। এছাড়া মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কীর্তন বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পুণ্যার্থীদের প্রবেশের সময় পাশ পারমিট গ্রহণ করতে হবে। সুন্দরবনে অবস্থানের সময় কোনো প্রকার বন্যপ্রাণী ধরা, খাওয়া ও সংরক্ষণ করা যাবে না। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবারও পুণ্যার্থী ছাড়া অন্যদের ওই সময় সুন্দরবনে ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। উৎসবকে ঘিরে হবে না রাস মেলা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাসপূর্ণিমা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। সভায় উপস্থিত ছিলেন, বাগেরহাট পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত¡বধায়ক অসীম কুমার সমাদ্দার, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম, সহকারী কমিশনার রুবাইয়া বিনতে কাশেম, দুবলারচর রাস উৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু, হিন্দু ধর্মীয় নেতা মধুসূদন দাম, সুমন মজুর দাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে অন্য এক আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিনকে সভাপতি এবং প্রদীপ বসু সন্তুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট রাস উৎসব উযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই মূলত ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ আয়োজন করবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ২০০ বছর ধরে সুন্দরবনের দুবলার চর-আলোর কোলে রাস পূজা ও রাস পূর্ণিমায় স্নান করে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পরবর্তী এই পূজাই সব ধর্মবর্ণের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়।##mn