বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)র বাগেরহাট জেলা শাখার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম (৬৪) আর নেই।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাগেরহাট শহরের সরুই এলাকার ভাড়া বাড়িতে রেজাউল করিমের মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, দুই ছেলেসহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, ওয়ার্কাস পার্টি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ. মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় নতুন জজ কোর্টের জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরের পুরাতন কোর্ট চত্বরের সিপিবি কার্যালয়ের সামনে কমরেড রেজাউলের মরদেহ রাখা হয়। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাগেরহাট শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলার আড়ুয়াবর্ণি গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রেজাউল করিম। ছাত্র অবস্থায় তিনি বাম ধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালে মাধ্যমিক, ১৯৭৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৭৯ সালে বিএ পাশ করেন। তিনি এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় যুক্ত হন। আইনপেশায় থাকলেও রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নিবেদিত। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী রেজাউল করিম দীর্ঘদিন সিপিবির জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তার মৃত্যুতে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এ রশিদ, জেলা সিপিবির সভাপতি তুষার কান্তি বসু, সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা আহ্বায়ক সফিকুর রহমান সজীব, সদস্য সচিব বেলাল হোসাইন বিদ্যা, বাগেরহাট জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক আহাদ উদ্দিন হায়দার, কৃষক লীগের সভাপতি কাউন্সিল আবুল হাসেম শিপন. মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাংবাদিক মাসুম হাওলাদারসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।বাগেরহাট জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, কমরেড রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি শহরের ভাড়াবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে ছিলেন আপোষহীণ। মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সবসময় ছিলেন সাহসী। সিপিবি একজন সাহসী যোদ্ধাকে হারালো। তার মৃত্যুতে দল গভীরভাবে শোকাহত।