শুক্র. এপ্রি ২৬, ২০২৪

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

বাগেরহাটে সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে জাসদ সভাপতি
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিভ্রান্তি দুর করতে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি .
বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাক্ষী আছেন, আবার ৭৫ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসের অনেকজন স্বাক্ষী আছেন, আবার এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আশির দশকে উত্থানপতনের সরাসরি স্বাক্ষী আপনারা সকলে আছেন। তারপরে খালেদা জিয়ার সরকার, শেখ হাসিনার সরকার, আবার খালেদা জিয়ার সরকার, ফকরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সরকার এবং সাম্প্রতিককালের ১২ বছর ধরে শেখ হাসিনার ১৪ দলের সরকার। এই সব ঘটনার বিভিন্ন কাল পর্বের স্বাক্ষী কিন্তু বর্তমান। বাংলাদেশে যখন বড় ঘটনা ঘটে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র দেশব্যাপী যুদ্ধ হচ্ছে। ৯০ এর গনঅভ্যুত্থান সমগ্র দেশব্যাপী গনঅভ্যুত্থান হচ্ছে, তাতে কোটি কোটি মানুষ অংশ গ্রহণ করছে। অনেক মত পথের লোক এক সঙ্গে অংশ গ্রহণ করছে। এখানে এই ইতিহাস চর্চাটা সঠিক হওয়া দরকার। তবে আমরা যারা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আছি, তারা যদি অতীতে তাকাই সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিব। কিন্তু বহু সময়ে রাজনীতিবিদের ইতিহাসের মূল্যায়নটা বা চর্চাটা সঠিক হয়না, খন্ডিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ একটা হাতির মত। আমি সব সময় বলি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি পিঁপিলিকার মত অংশগ্রহণ করেছি। পিঁপিলিকার হাতি দর্শনের মত। ঁিপপিলিকার হাতি দর্শনের উপর চট করে মন্তব্য করতে নেই। যারা মন্তব্য করেন একটু ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বদলকারী ঘটনা। সেই ঘটনার অতীত আছে, তখনকার বর্তমান আছে এবং ১৫ আগষ্টের পরবর্তি ঘটনাবলি আছে। সব মিলিয়েই এই হত্যাকান্ডের মূল্যায়ন হওয়া দরকার। সেইজন্য আমি বারবার বলেছি আমরা যারা এই মুহুর্তে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি ইতিহাসের দিকে তাকান। কিন্তু ইতিহাস নিয়ে চর্চাটা করতে গেলেই খন্ডিত চর্চা হবে, তাহলে ভুলভ্রান্তি হবে, বিভ্রান্তির জন্ম হবে। সুতরাং আমি বলেছি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মত ঘটনা যে ঘটনার প্রত্যক্ষ জল্লাদ বাহিনীর বিচার আচার হয়েছে। তাদের সাজা কার্যকর হচ্ছে। এই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী এর পৃষ্টপোষক, সমর্থনকারী এই সবকিছু মিলিয়ে জাতিকে প্রকৃত একটা সামগ্রিক ধারনা দিতে হলে একটা জাতীয় তদন্ত কমিশন করা ও শে^তপত্র প্রকাশ করা দরকার। সেই তদন্ত কমিশন ও শে^তপত্র জাতিকে সকল বিভ্রান্তির থেকে মুক্তিদেবে এবং খন্ডিত ইতিহাস চর্চার যে সমস্যা সংকট সেই সংকট থেকেও আমাদের বাঁচাবে। সুতরাং যার কাছে যে তথ্য আছে তা ওই তদন্ত কমিশনের কাছে পেশ করুন। এলোপাথাড়ি ও খন্ডিত বক্তব্য না দিয়ে অথবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কোন কান্ড না ঘটিয়ে বরং সকল তথ্য নিয়ে তদন্ত কমিশনে হাজির হন এবং শে^তপত্র সঠিকভাবে প্রকাশে সাহায্য করুন। সেইভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যার উত্তর পর্ব যে রাজনীতি চলছে সেই রাজনীতিতে আমাদের সহায়তা হবে। আরেকটা হচ্ছে যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে যখন সামরিক শাসকরা দেশ দখল করে নিল, তখন আমরা খেয়াল করলাম সামরিক শাসকরা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতার পথে, জঙ্গিবাদের পথে, দ্বিজাতিতত্তের পথে এবং পাকিস্তানের পথে বাংলাদেশকে ঠেলে দিল। তখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কতিপয় দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও জাসদ সবকিছু বিবেচনা মূল্যায়ন করে আমরা ঘনিষ্ট হলাম, ঐক্য করলাম। সেই ঐক্যের ভিত্তির উপর দাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের অপরাপর গনতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো সেই ঐক্যে শামিল হল। সেই ঐক্যের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান পন্থার থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথে চালিত করছি। শেখ হাসিনার হাত ধরে বঙ্গবন্ধু নির্বাসন থেকে সমহিমায় স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছেন। তবে আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রত্যাবর্তন পর্ব, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন পর্বটা স্থায়ী টেকসই নিরাপদ করতে হলে এখনো অনেকদুর এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এখন অনৈক্যের সময় না, বিভেদের সময় না, বরং যে ঐক্যস্থাপিত হয়েছে সেই ঐক্য চোখের মনির মত ধরে রেখে আগামী কয়েকটা বছর এই বাংলাদেশ বাংলাদেশের পথে টেকসই করতে পারি, নিরাপদ করতে পারি, স্থায়ী করতে পারি তার জন্য কাজ করতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এই মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবানদের দখল উত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমেরিকা এবং ন্যাটো যৌথভাবে সমঝোতার মধ্যে দিয়ে তালেবানদের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। তালেবানদের আফগানিস্তান দখলের ঘটনা দেখে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ আরও মুসলমান প্রধান দেশগুলোতে একটা তালেবানি যোশ ফুটে ওঠার লক্ষণ দেখছি। এবং সেই তালেবানি যোশের প্রভাবে প্রভাভান্বিত হয়ে সাম্প্রতিককালে বিএনপি এবং জামায়াতের নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার সাংবিধানিক সরকারকে উচ্ছেদ করার হুংকার, হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করেছে। এটি আমার নজরে এসেছে। সুতরাং আমি বলব বিএনপি জামাত চক্র তালেবানি যোশে উদ্বুদ্ধ হোক অথবা না হোক সরকার উৎখাতের যে উপর্যুপরি হুমকি, গত ২০০৯ সাল থেকে দেখছি। একাধিকবার দেখেছি। এবং তারা মুখে বলে নির্বাচন ও গনতন্ত্রের কথা কিন্তু তারা বল প্রয়োগ, চক্রান্তের মধ্যে দিয়ে অবৈধ ও ভুতের সরকার প্রতিষ্ঠার ঝোক তাদের আছে। তাদের নির্বাচন, গনতন্ত্র লক্ষ না, তাদের লক্ষ হচ্ছে যে কোন পন্থায় সরকার উৎখাত কর, একটা অস্বাভাবিক সরকার কর, বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের পথে ঠেলে দাও, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা বন্ধ করে দাও, বঙ্গবন্ধুর বিচারের সাজা কার্যকরের কাজ বন্ধ করে দাও, খালেদা জিয়ার দূর্নীতির অপরাধ থেকে মুক্ত করে আবার রাজসিংহাসনে বসাও তারেক রহমানকে বিদেশে থেকে দেশে ফিরিয়ে আনো, জঙ্গি সন্ত্রাসীদের বিচার বন্ধ করে দাও।
যতটুকু সমৃদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধের পথে দেশ দাঁড়িয়ে আছে এটিকে টেকসই করতে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, দূর্নীতি লুটপাট এবং বৈষম্যকে একচুল ছাড় দেব না। আমরা শেখ হাসিনার সাথে ঐক্যে আছি, ঐক্যে থাকব বলে তাই জাসদ মনে করে।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময়ে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মাসুদুর রহমান, জাসদের বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সবুজ চন্দ্র রায়, জাসদ ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নাঈম মল্লিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকেলে তিনি জাসদ ছাত্রলীগের সাথে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ap

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *