মাসুম হাওলাদার :
মানবতার সেবায় সর্বমহলে
প্রশংসিত পুলিশ
দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ব্যবস্থাপনা ও জননিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায় মানুষের খাদ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। শুধু তাই নয়, লকডাউন এলাকায় পাহারা বসানো, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করা, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন বা সৎকারে সহায়তার কাজও করে যাচ্ছে পুলিশ। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যখন দেশের প্রায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, তখন অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় পুলিশ। সবকিছু উপেক্ষা করে নিজেদের বুক এগিয়ে দেয় করোনাযুদ্ধে জনগণকে রক্ষার দৃঢ় সংকল্পে। ঠিক যেভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে পুলিশ। ঠিক সেভাবেই মহামারি করোনার এই মানবিক বিপর্যয়কালে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আবার প্রতিরোধের ডাক দেয় পুলিশ। জঙ্গিবাদ দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস দমন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ ও জাতিসংঘ শান্তি মিশনে পুলিশের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত। অভাবী মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ যাতে চুরি না হয় সেক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে পুলিশ। সব মিলিয়ে করোনার এই দুর্যোগে পুলিশের এক নতুন মানবিক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। পুলিশের মানবিক এসব কর্মকাণ্ড সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। আর এই সেবা দিতে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬২৭ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ইতিমধ্যে পুলিশের ৬৬ জন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তবে দেশব্যাপী পুলিশের এই মানবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কিছু পুলিশ সদস্যের বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা সমালোচিত হয়েছে। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এ স্লোগান সামনে রেখে অধিকতর জনকল্যাণমুখী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পুলিশ যখন এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখনই জনবান্ধব পুলিশিং রূপ নেয় অপ্রতিরোধ্য মানবিক পুলিশিংয়ে। পুলিশ পরিচালিত ৯৯৯-এর সেবা প্রান্তিক মানুষের কাছেও পৌঁছেছে। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ সেবা প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে, মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আস্থার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদান, মোবাইল অ্যাপস এবং তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে বিভিন্ন সফটওয়্যার সংযোজন ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে জনগণের সেবা প্রাপ্তি এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে। দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী ও সমাজের তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) সম্প্রদায়ের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। গাজীপুরের এসপি জেলা পুলিশের সব রেশন সামগ্রী সরাসরি অসহায় মানুষের ত্রাণ ঘোষণা দিয়ে সেসব খাদ্য ও ব্যবহার্য সামগ্রী নিয়ে নিজেই পৌঁছে যান ঘরে ঘরে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের বাসায় বাজার পৌঁছে দিতে ‘ডোর টু ডোর শপ’ চালু করে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও পুলিশকেই মাঠে থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই করোনা সংকটে যখন পাশে কেউ থাকে না, তখন পুলিশ সদস্যরা গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। স্বজনরা যেখানে রাস্তায় ফেলে গেছেন, পুলিশ সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। করোনায় মৃত্যুর পর লাশ দাফনের কাজটিও করতে হচ্ছে পুলিশকে। এ কারণে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সবার আগে পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
মহামারি করোনার সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। আক্রান্তদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা, লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত, নিজস্ব অর্থায়নে অসহায়দের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এ বাহিনীর সদস্যরা। নিজ দায়িত্বের বাইরে ‘মানবিক পুলিশ’ হিসেবে মানুষের পাশে থেকে সেবা দিচ্ছে। জনগণকে সেবা দেওয়ায় সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে পুলিশ। করোনায় পুলিশ যেভাবে জনগণের কাছে গেছে, তাদের পাশে থেকেছে, তাদের সুরক্ষা দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের প্রশংসা করছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার পুলিশের এ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশ সর্বদা জনগণের পাশে থেকে সেবা দিয়েছে। দেশের যে কোনো দুর্যোগে পুলিশ সবার আগে সর্বদা এগিয়ে আসে। যে কোনো সেবায় জনগণের প্রধান ভরসাস্থল পুলিশ। মহামারি করোনায় সেটার চূড়ান্ত রূপ মানুষ দেখেছে। করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা কাজ করেছেন। পুলিশের এসব মানবিক কর্মকাণ্ড এখন মানুষের মুখে মুখে। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি পুলিশ সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।