বুধ. মে ৮, ২০২৪

উত্তাল সংবাদ ডেস্কঃ।

জাতীয় ফল কাঁঠাল,

সব ফলের কদর বেশি, উপেক্ষিত কাঁঠাল

ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠাল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেই। তবে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের কাঁঠাল সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষণা করছে বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউট এর ফল গবেষণা কেন্দ্র। তারা কাঁঠাল দিয়ে কয়েকটি পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে গবেষণা করছেন। যেন কাঁঠালের উৎপাদিত পণ্য সারা বছর পাওয়া যায়, এর মধ্যে কাঁঠালের চিপস, কাঁঠাল সত্ত্ব, কাঁঠালের আঁচার উল্লেখযোগ্য।

ঠাকুরগাঁওয়ে অধিকাংশ বাড়ির উঠনে ও বাড়ির আশে পাশের ফাঁকা জায়গায় ও মাঠে ঘাটে সবখানে অন্যান্য ফলজ গাছের মাঝে সব চেয়ে বেশি দেখা যায় কাঁঠাল গাছ। প্রতি বছর গাছ ভর্তি কাঁঠাল পাওয়া গেলেও কোনো বছরই কাঁঠাল থেকে খুব বেশি আয় করতে পারেনা গাছ মালিকরা। অধিকাংশ গাছ মালিক ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিক্রি করার চেয়ে গবাদি পশুর মৌসুমী খাবার হিসেবে কাঁঠাল ব্যবহার করে থাকেন।

তাই গাঁ খাটিয়ে যত্ন না করেই আপন মনে বেড় উঠা সম্ভাবনার কাঁঠাল গাছেই পঁচে যায়। অনেক সময় খুব বেশি পেঁকে গিয়ে গাছ থেকে খসে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিবছরের মত এবারেও ব্যপক ফলন এসেছে কাঁঠালের। দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী আম লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমী ফলের উপর আঘাত হানলেও কাঁঠালের কোনো ক্ষতি হয়নি। গাছের ডালে ডালে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে কাঁঠাল।

জেলার হরিপুর উপজেলায় কাঠালডাঙ্গী গ্রামের ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে ১০টি বড় বড় কাঁঠালের গাছ আছে। প্রতিবছরে অনেক কাঁঠাল ধরে। এবারেও গাছ ভর্তি কাঁঠাল এসেছে। আর ২০ দিনের মধ্যে পাকতে শুরু করবে। তবে, আমি প্রতি বছরে দু’একটা স্বাদের কাঁঠাল খাওয়া হলেও অধিকাংশ কাঁঠাল পঁচে গিয়ে গাছ থেকে খসে পড়ে। যেগুলো সংগ্রহ করি সেগুলো গবাদি পশুকে খাওয়াই। পাইকাররা আসে কাঁঠাল কিনতে কিন্তু ন্যায্য দাম বলেনা। তারা কাঁঠাল প্রতি দাম বলে ৫-১০ টাকা। এবার আরও বেশি ফলন হয়েছে কাঁঠালের। এবার তো আরও কম বলবে দাম। তাই কাঁঠাল বিক্রি করার থেকে গবাদি পশুকে খাওয়ানো উত্তম মনে করি।

 
একই গ্রামের নারী মমিনা খাতুন মনে করেন ঠাকুরগাঁওয়ে যে পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয় তা অন্য কোনো জেলাতে হয় কিনা জানা নাই তার। বলেন, কাঁঠাল দেশের জাতীয় ফল। অথচ এ ফলের কোনো কদর নেই। সারাবছর এ ফল কিভাবে সংগ্রহ করে রাখা যায় বা আমের মত অন্য পণ্যে পরিণত করা যায় তার বাস্তব কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়নি কৃষি ইন্সটিটিউট। আমরা অবশ্যয় প্রত্যাশা করি জাতীয় ফলের স্বাদ আমরা সারাবছরই পাবো।

কৃষক আতাউর রহমান বলেন, আমার আবাদি জমির চারপাশে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি কাঁঠাল গাছ আছে ৩০ থেকে ৪০টি। কোনো বছরই ভালো দাম পাইনি। কাঁঠাল শুধু ঠাকুরগাঁওয়ে নন। পঞ্চগড় দিনাজপুরেও খুব ভালো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ তিন জেলায় কাঁঠালের মাঝে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কাঁঠালে কোনো ঝুঁকি নেই। কাঁঠাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে মৌসুমে গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ন্যায্য দাম পাবে।

কাঁঠাল ব্যবসায়ী পয়গাম বলেন, গ্রামে ঘুরে ঘুরে বাড়ি বা বাগান থেকে সুলভমূল্যে কাঁঠাল কিনে থাকি। তবে, জেলাতে কাঁঠালের চাহিদা খুব বেশি না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলে পাঠাতে হয়। এতে গাড়িভাড়া অনেক বেশি লাগে। অনেক সময় পথেই কাঁঠাল পঁচে যায়। ফলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এ বছর কাঁঠাল আরও বেশি পঁচে যাওয়ার বা নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ভরা মৌসুমে একটা সময় মনে হয় কাঁঠাল বুঝি কোনো অবহেলিত ফল। জেলার অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে কাঁঠালে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কাঁঠাল সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে কোনো প্রতিষ্ঠান হলে জেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ অনেক গাছ মালিক অর্থনৈতিকভাবে মজবুত হবে। কাঁঠালের ন্যায্য দাম পাবে গাছ মালিকরা। যত্ন সহকারে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হবে কাঁঠালের।

 
জেলার বন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, যেগুলো গাছ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে থাকে সেগুলোর কোনো হিসেব নেই আমাদের কাছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানা যায়, জেলাজুড়ে ২৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের গাছ রয়েছে। তবে এর বেশিও হতে পারে বলে জানান, কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠাল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেই। তবে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের কাঁঠাল সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষণা করছে বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউট এর ফল গবেষণা কেন্দ্র। তারা কাঁঠাল দিয়ে কয়েকটি পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে গবেষণা করছেন। যেন কাঁঠালের উৎপাদিত পণ্য সারা বছর পাওয়া যায়, এর মধ্যে কাঁঠালের চিপস, কাঁঠাল সত্ত্ব, কাঁঠালের আঁচার উল্লেখযোগ্য।an.bz

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *