সোম. মে ২০, ২০২৪

উত্তাল সংবাদ ডেস্ক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আদালতের রায় বাংলায় লেখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে ট্রান্সলেটর নিয়োগ দানের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতের রায় বাংলায় লেখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনে এক্ষেত্রে ট্রান্সলেটর নিয়োগ দানের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বিচারাধীন মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণে বিচারক এবং আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে ঢাকা জেলার নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রায় যদি কেউ বাংলায় লিখতে না পারেন,ইংরেজিতে লেখেন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেই রায়টা বাংলায় ট্রান্সলেশন করে যেন প্রচার হয় সে ব্যবস্থাটা করে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ইংরেজিতে লিখতে লিখতে অনেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তাই বাংলাতেই রায় লিখতে হবে, এ ধরনের চাপ প্রয়োগ ঠিক নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমি বলবো এগুলো ট্রান্সলেশন করা এমন কোন কঠিন কাজ নয়, অনেক প্রফেশনাল ট্রান্সলেটর আছেন। তাদেরও আপনারা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে পারেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রান্সলেটরদের কাজ হবে যেটাই লেখা হোক সব ট্রান্সলেশন হয়ে যাবে এবং সেটাই প্রচার হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে। বিচারের ফলে কি রায়টা হলো সে সেটা নিজে দেখে বুঝতে পারবে, জানতে পারবে।মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের সহযোগিতায় তার সরকার সর্বদা প্রস্তুত উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারাধীন মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণেও বিচারক এবং আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জুন-২০২০ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আদালতে ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৮টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় দেওয়ার উপায় বের করার জন্য সকল বিচারক এবং আইনজীবীদের আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই এত মামলা এভাবে জমে যেন না থাকে, কিভাবে এইসব মামলার বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যায় অবশ্যই এ ব্যাপারে একটু আন্তরিক হবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন। এজন্য যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে।আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আইন সচিব গোলাম সারোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাল থাকে, স্বস্তিতে থাকে, শান্তিতে থাকে, নিরাপদে থাকে এবং উন্নত জীবন পায়। আর এখাবেই যেন আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আমরা এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি।তার সরকারের সময়ে চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ খুনের মামলা এবং হলি আর্টিজেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাসহ সকল চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার সম্পন্ন করা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সকল বিচারককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে অধঃস্তন আদালতে ১১২৬ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া, দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সরকারিভাবে আইনি সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে এবং সুপ্রীম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে-বলেন তিনি।
সন্ত্রাসবিরোধী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৭টি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, ৭টি বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইবুন্যাল স্থাপন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের পর ২০২০ সালে আরও ৬টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ছাড়া ৭টি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,
করোনাভাইরাস সংক্রমণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার প্রদান অব্যাহত রাখতে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার, আইন ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জের কারাগারে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দাগী আসামীদের বিচারের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারাগারেই ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা রাখতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *