শনি. মে ৪, ২০২৪

উত্তাল সংবাদ ডেস্কঃ

আজ ১১ নভেম্বর. প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি বাগেরহাটে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সংবাদ
সম্মেলনে বিএনপি’র সন্ত্রাসী হামলার বিচার হয়নি .
বাগেরহাটে রাজনৈতিকভাবে সাংবাদিক নির্যাতনের স্মরনীয় দিন ১১ নভেম্বর। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ২০০১ সালের ১১ নভেম্বর বিকালে বাগেরহাটে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে স্বশস্ত্র হামলা করেছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সামজকল্যান প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডাঃ মোজম্মেল হোসেন এমপি ও আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডঃ আলী আকবরসহ এখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সংবাদকমীদের মধ্যে ৫ জন পেশাদার সংবাদকর্মীকে এলোপাতাড়ী পিটিয়েও ছুরিকাঘাত করে আহত করেছিল। ওই ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ২০০৩ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগেরহাটে এসে সার্কিট হাউসে ওই সংবাদ কর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সাহসিকতার সাথে বিএনপি-জামায়াতের অপ-রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহবান জানিয়েছিলেন। একই সাথে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এ নৃশংসতার বিচার হবে। আহত সংবাদ কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। অথচ, পরপর ৩দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে হামলাকারীদের বিচার হয়নি এবং নির্যাতিত ৫ সংবাদ কর্মীরও কোন খোঁজ রাখেনি বাগেরহাটের বর্তমান ক্ষমতাসীন’রা। সরকার ক্ষমতায় গিয়ে সুবিধা নেয়া বাগেরহাটের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ওই ঘোষনা বাস্তবায়ন করেনি। প্রসঙ্গতঃ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর সারাদেশের ন্যায় বাগেরহাটেও বিএনপি- জামায়াত দলীয় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তান্ডব চালায়। তখন এখানের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ্য সভা সেমিনার বা কেন্দ্রীয় কোন কর্মসুচী পালন করতে পারছিলনা। উপায়ন্তর না পেয়ে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মরহুম অ্যাডভোকেট ফকির মোঃ মুনসুর আলী’র বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়াস্থ বাসভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০০১ সালের ১১ নভেম্বর বিকালে সংবাদ সম্মেলন আহবান করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদ্য সাবেক হওয়া সমাজ কল্যান প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন, সাধারন সম্পাদক ফকির মোঃ মুনসুর আলী ও অপর আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে হাতে -গোনা কয়েকজন সংবাদ কর্মী সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনের খবর সংগ্রহে হাজির হয়। আর সংবাদ সম্মেলন চলাকালে যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ১০/১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। ওই হামলায় বাসসের জেলা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শাহ আলম টুকু, দৈনিক প্রথম আলোর তৎকালীন প্রতিনিধি আহাদ হায়দার, জনকন্ঠের প্রতিনিধি বাবুল সরদার, সংবাদ সংস্থা ইউএনবি ও বর্তমানে ৭১ টেলিভিশন প্রতিনিধি বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবত্তি ও তৎকালীন দৈনিক রানার ও বর্তমান দৈনিক সংবাদ, দৈনিক প্রবাহ ও অনলাইন পোর্টাল স্বাধীন আলো ডট কমের প্রতিনিধি আজাদুল হক রক্তাক্ত জখম হন। চিহ্নিত ওই সন্ত্রাসীরা তৎকালীন সদ্যগত হওয়া সমাজ কল্যান প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডঃ আকবর হোসেন কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে আহত করে। বিএনপি-জামায়াত দলীয় বেশ কয়েকজন সংবাদ কর্মী এ হামলার ঘটনা হবে আগে থেকে জানতে পেরে আওয়ামী লীগের ওই সংবাদ সম্মেলনে আসছিল না বলে প্রচার পায়। আহত একজন সংবাদ কর্মী ওই দিনের নৃশংস ঘটনার বর্ননা দিয়ে বলেন বিএনপি- জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে দলীয় পেশাদার সন্ত্রাসীদের দ্বারা নৃশংস এ ঘটনায় সারাদেশের সংবাদ কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এতে করে সরকারের উপর মহলের নির্দেশে বাগেরহাট মডেল থানার তৎকালীন ওসি মোঃ আবু সাঈদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আর এই মামলাটি তদারকী করেন তৎকালীন বাগেরহাট সদর সার্কেলে’র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ কাইয়ুমুজ্জান খান। হামলায় আহত সংবাদ কর্মীদের ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি ও তদন্ত শেষে পুলিশ জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ছাত্রদল ক্যাডারদের ১৩ জন কে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। তবে কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছিলনা পুলিশ। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার আগে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলায় স্বাক্ষী না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তৎকালীন সময়ে বাগেরহাটে কর্তব্যরত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি অতি গোঁপনে খারিজ করে দেন। অথচ, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি’র দু’জন ভিকটিম ও স্বাক্ষী ওই আদালতেরই আইনজীবি। আর বাকী ভিকটিম সংবাদকর্মীরা বাগেরহাট জেলা শহরে অবস্থান করে এবং পেশাগত কারনে নিয়মিত আদালতে যান। মামলা খারিজ হওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানাজানি হলেও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী বা আওয়ামী আইনজীবিরা এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যাহত তান্ডবে’র এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৩ সালে বাগেরহাট জেলা শ্রমিক লীগের তৎকালীন সভাপতি জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান চরমপন্থিদের হাতে নিহত খান ছাদেকুল ইসলাম ছাদু খার পরিবার কে সান্তনা দিতে বাগেরহাটে আসেন। ওই সময়ে বাগেরহাট সার্কিট হাউজে অবস্থান নিয়ে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিকদের সমবেদনা জানান। জননেত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতার সাথে সাংবাদিকতার পরামর্শ দিয়ে বলেন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এ নির্যাতনের বিচার হবে। এরপর থেকে এখানের কতিপয় ধোঁকাবাজ আওয়ামী লীগ নেতারা সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টি পুঁজি করে ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলসহ রাজনীতি করে সুবিধা নিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতকে হটিয়ে বাগেরহাটের মানুষ জেলার ৪ টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এমপি নির্বাচিত করেছেন। অকৃতজ্ঞ ওই নেতারা নির্যাতিত সংবাদ কর্মীদের কোজও নেননি। বরং অনেক অনেকে ওই সংবাদ কর্মীদের আরো ক্ষতি করেছেন বলে ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীরা জানান। ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন ও অ্যাডভোকেট ফকির মোঃ মুনসুর আলী প্রয়াত হয়েছেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে হামলাকারী চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসীরা এখানের আওয়ামী লীগের টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজ নেতাদের ছত্র-ছায়ায় টেন্ডারবাজী করছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অনেকে নব্য আওয়ামী লীগ নেতা হয়েছেন এবং বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন আওয়ামী সরকারের কতিপয় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী নেতাদের মাধ্যমে। ভিকটিম একাধিক সংবাদকর্মীসহ স্থানীয় অনেকে বলছেন বিপদে না পড়লে কেউ কারো কথা মনে রাখেনা তাই আওয়ামী লীগ আবার যখন বিরোধী দলে যাবে তখন আহত এই সংবাদকর্মীদের মুল্যায়ন করবেন। #az

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *