শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪

 বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের সদরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। অস্বাভাবিকভাবে টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে অস্বাভাবিকভাবে টমেটোর দাম কমে যাওয়ার কারণে কৃষকদের বহু কষ্টে উৎপাদিত টমেটো ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, শীতকালীন সবজি হিসেবে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বাগেরহাট সদরসহ জেলার চিতলমারী উপজেলায় টমেটোর আবাদ হয়। বসন্তকালেও জেলা সদর ও অন্যান্য স্থানে আবাদ হয় টমেটোর। গত বছরগুলোতে বেশি উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলায় আরও বেশি জমিতে টমেটো আবাদ করেন কৃষকরা। ফলন ভালোই হয়েছে, বাজারে প্রথম দিকে দামও ভালো ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে টমেটোর দাম একেবারেই কমে গেছে। এক মাস আগে যে টমেটো ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হতো সেই টমেটো এখন বাজারে ২ থেকে ৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মূল্য কমে যাওয়ায় ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো। টমেটো ক্ষেতের পরিচর্যা কিংবা ফলন রক্ষার জন্য কোনো চেষ্টাও করছেন না কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, বাগেরহাটে এ বছর ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়। এর মধ্যে সব থেকে বেশি চাষ হয়েছে চিতলমারী উপজেলায়। এই উপজেলায় ৬১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন। প্রথম দিকে বেশি দাম পেয়েছেন চাষিরা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার বাগেরহাটে চাষিরা হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করেন। ফলে শীত আসার আগে টমেটো বিক্রি করতে পেরেছেন। প্রথম দিকে ৮০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হয়। তবে ফলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে দাম। এখন এক-দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চিতলমারী উপজেলার গরীবপুর গ্রামের চাষি আশীষ গাইন বলেন, ‘টমেটোর ফলন যখন তেমন ওঠেনি, তখন ভালো দাম ছিল। ফলন যখন বেশি হলো, দাম কমে গেল। এখন দুই -তিন টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যদি মোটামুটি দামে বিক্রি করতে পারতাম, তবে কিছুটা লাভ হতো।’
চরবানিয়ারি প্রামের কৃষক সুধাংশু বালা বলেন, ‘আবহাওয়ার কারণে এবার প্রথম দিকে গাছে টমেটো ভালো হয়নি। যখন ফলন হয়েছে, তখন আর দাম পাইনি। প্রচুর টমেটো গাছেই রয়ে গেছে। এখন গাছেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো।’ তিনি সরকারের কাছে টমেটো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, চিতলমারী উপজেলায় এ বছর ৬১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৪৫ মেট্রিক টন। শুরুতে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন এক-দুই টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ফলে যাদের জমি রাস্তা থেকে একটু দুরে, তারা টমেটো তুলছেন না খরচ ওঠে না বলে। ফলে উপজেলায় তিনশত মেট্রিক টন টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছি টমেটো সংরংক্ষণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার। যদি এখানে হিমাগার করা যায়, তবে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হবেন।’
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, জেলায় এ বছর ৪৫ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এখন ক্ষেতে চারশত মেট্রিক টন টমেটো পঁচে নষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘চাষিরা যাতে উপযুক্ত দাম পান, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *