মঙ্গল. এপ্রি ১৬, ২০২৪

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটে ঘুষ ছাড়া মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশ হলেন ৩১ জন। কখনও ভাবিনি ঘুষ ছাড়া আমার মেয়ের চাকুরী হবে। আল্লাহ‘র কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হল। আমরাও চিন্তামুক্ত হলাম। এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত জুইয়ের বাবা হতদরিদ্র কৃষক মোঃ জিল্লুর রহমান।
সোমবার (০৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টায় নতুন পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে মেয়ের চাকুরীর খবরে আবেগাপ্লুত মোঃ জিল্লুর রহমান আরও বলেন, সব সময় চেয়েছি আমার মেয়েরা কিছু করুক। ছেলে নেই তো কি হয়েছে। আল্লাহ মেয়েতো দিয়েছেন। তাই চরম আর্থিক অনাটনের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে মেয়েদের পড়াশুনা চালু রেখেছি। কিন্তু মেয়েদের চাকুরী নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমার টাকাও নেই, আবার বড় কোন আত্মীয় স্বজনও নেই। তারপরও আল্লাহর রহমতে মেধার জোরে আমার মেয়ের চাকুরী হয়েছে। কোন প্রকার সুপারিশ ও ঘুষ ছাড়া চাকুরী প্রদান করায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিকৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
শুধু জুই নয়, কনস্টেবল পদে বাগেরহাট জেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত ৩১ জনের বেশিরভাগই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিনা পয়সায় চাকুরী পেয়ে খুশি তারা। সোমবার (০৮ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের নাম ও রোল নাম্বার ঘোষনা করলে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় নতুন পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। চাকুরী প্রাপ্তরা বাবা-মাসহ অভিভাবকদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। সকলের দোয়া চান তারা।
এদিকে ১৩০ টাকা ব্যয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদে মেয়ের চাকুরী হওয়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কচুয়া উপজেলার বারুইখালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা মোস্তফা মোল্লা। খুশিতে চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল হতদরিদ্র এই বাবার। কথাই বলতে পারছিলেন না।
কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত মোস্তফা মোল্লা মেয়ে লাবনী খানম বলেন, আমরা সাত বোন কোন ভাই নেই। বাবা-মায়ের সব চিন্তা আমাদের নিয়ে। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে এসএসসি পাশের পর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরীর চেষ্টা করেছি, হয়নি। আল্লাহর রহমতে চাকুরী হয়েছে। এখন সংসারের পাশাপাশি ছোট বোনদের পড়াশোনার জন্যও কিছু টাকা দিতে পারব। এই বলে বাবাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন লাবনী খানম।
অনলাইনে আবেদনের পরে ২৯ নভেম্বর থেকে ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল পদে ৩১ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে বাগেরহাট জেলা পুলিশ। সকল প্রক্রিয়া শেষে সোমবার (০৮ নভেম্বর) রাত দেড়টায় কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ২৫ জন ছেলে ও ৬ মেয়ের নাম ঘোষনা করেন বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক।

ফলাফল ঘোষনা শেষে পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা পুলিশ কনষ্টেবল পদে চাকুরী দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি মেধাবীদের পুলিশ সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার। ভবিষ্যতেও সকল নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকে আমরা খুবই সতর্কতার সাথে দালাল ও প্রতারক চক্রদের দমন করার চেষ্টা করেছি। এর অংশ হিসেবে কনস্টেবল পদে নিয়োগের দালালি করার অপরাধে তিন জন প্রতারককে আটক করেছি।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *