বুধ. এপ্রি ২৪, ২০২৪

 

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

মানুষের দুর্ভোগ এখনও বৃষ্টির পানি নামেনি লোকালয় থেকে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বাগেরহাটের লক্ষাধিক মানুষ।  বাগেরহাটে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সরেজমিনে পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেণ। বৃষ্টির পানিতে মাছ ও বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চারদিন ধরে পানিতে তলিয়ে রয়েছে আমন ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। ধানের চারা নষ্ট হওয়ায় আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কা করছেন চাষিরা। বসতঘর ও রান্না ঘরে পানি ওঠায় অনাহারে দিন কেটেছে অনেকের। পানিবন্দি মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে।    বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টির পানি নামতে শুরু করলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৮৩ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। অন্তত পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের।  জেলায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে শরণখোল উপজেলার। এখনও এই উপজেলায় ৫৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ৭৫০ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। সবজি ক্ষেতগুলো নিমজ্জিত রয়েছে পানির নিচে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষি ও পানিবন্দি মানুষেরা। উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ি-মৌরাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা। শরণখোলা উপজেলার পূর্বখাদা গ্রামের মমতাজ বেগম বলেন, চারদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। পানিতে বসতঘর, রান্নাঘর ও পায়খানা সব একাকার হয়ে গেছে। হাঁস-মুরগি, গরু সব রাস্তায় রাখতে হচ্ছে অনাহারে। নিজেরাই খেতে পারি না, আর গবাদিপশুকে কি খাওয়াবো। একই গ্রামের মুজিবুর শিকদার বলেন, পানিতে এমন অবস্থা যে ঘরে থাকারও কোনো কায়দা নেই। এভাবে আর কয়েকদিন থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। শুধু এই বৃষ্টি হয়, প্রতি বছর তিন চারবার পানিতে নিমজ্জিত থাকতে হয় আমাদের।  শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ি মৌরাশি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, তিনদিন ধরে ঘরের ভেতরে দুই ফুট পানি। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। পার্শ্ববর্তী একবাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি।একই গ্রামের মহিদুল বলেন, চারদিন ধরে আমার ১০ কেজি ধানের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সকালে কিছু চারা উঠিয়ে দেখেছি বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এবার আমন ধান লাগানোটা খুব কষ্টের হয়ে যাবে। শুধু পূর্ব খাদা আর মৌরাশি নয় এই উপজেলার সব গ্রামেরই এক অবস্থা। রামপাল উপজেলার হুরকা গ্রামের লতিফ বলেন, এলাকার ঘের সব ভেসে গেছে। মাছ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন চাষিরা। বাগেরহাট পৌরসভার বাগানবাড়ি বস্তি এলাকার বাসিন্দা ফুলবানু বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে আমাদের বস্তির ৪৫টি পরিবার পানিবন্দি। ঘরের চারপাশে পানি, রান্না ঘরে পানি। কারো কারো ঘরের মধ্যেও পানি। পয়ঃনিষ্কাসনের ব্যবস্থাও ভাল নেই। এই অবস্থা কয়েকদিন থাকলে পানিবাহিত রোগে আমাদের মরতে হবে। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। তবে আমার উপজেলার চাষিরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিদের আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় খুব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ করছি। এদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে। শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, শরণখোলা উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে। পানিবন্দি মানুষের পাশে আমরা রয়েছি। আমরা সাধ্যমত মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছি। তবে পানিবন্দি মানুষের জন্য আরও বেশি খাদ্য সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনও সব উপজেলার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করতে পারিনি। জেলায় বেশকিছু আমনের বীজতলা, সবজি ক্ষেত, রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানি টানার পরে বোঝা যাবে আসলে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। এজন্য শরণখোলায় ৫, মোংলায় ৪, রামপাল ১ এবং মোরেলগঞ্জে ২ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও কোনো মানুষ যাতে অনাহারে না থাকে এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *