শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪

নাটোর প্রতিনিধিঃ

বর্ষাকে ঘিরে নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন,

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বাভাবিক হয়নি যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল মানুষের চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর যখন চারদিকে বন্যার পানিতে অজস্র রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে, তখন নৌকা ও কলাগাছের ভেলা হয়ে উঠেছে নিচু ও চরাঞ্চল মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা। আর এ কারণেই টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এছাড়াও কারিগরদের পাশাপাশি পুরনো নৌকাগুলোও মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের নৌকার মাঝিরা।এদিকে আষাঢ় মাস। থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির পানি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়তে শুরু করেছে পানি। চলনবিলের নদ-নদী খাল বিলগুলো ভরে উঠছে নতুন পানিতে। ছোট ছোট গ্রামগুলোকে দেখতে দ্বীপের মতো লাগছে। যোগাযোগ ও মাছ ধরার কাজে চলনবিলের প্রধান বাহন ডিঙ্গি নৌকার কদর বাড়ছে ব্যাপক হারে। সেই সঙ্গে নৌকা বেচা কেনায় জমে উঠেছে স্থানীয় হাট বাজারগুলো।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই ও নন্দকুজা নদীর পানি চলনবিলে প্রবেশ করায় প্রতিনিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে চলনবিলের মানুষের পারাপার ও মাছ ধরার  প্রধান বাহন ডিঙি নৌকা তৈরি ও কেনা বেচায় পরেছে ধুম।

শনিবার সরেজমিন চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর পৌর শহরের বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় নৌকার হাট ঘুরে দেখা যায়, বর্ষাকে ঘিরে নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাটের দক্ষিণাংশে ২৫ থেকে ৩০টি কারখানায় চলছে ডিঙি নৌকা তৈরীর কাজ। কারখানার সামনে একটির পর একটি নৌকা উঠিয়ে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এক থেকে দেড় কি.মি. জুড়ে বসেছে ওই নৌকার হাট। বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ। সপ্তাহের দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এ নৌকার হাট। হাটে বিক্রি হয় শত শত নৌকা। নৌকা কেনা বেচায় নিয়োজিত ব্যবসায়ী, মিস্ত্রি ও ক্রেতার হাকডাকে মুখরিত নৌকা হাট। নৌকা ক্রয়ে সুফল পাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষরা। বর্ষা মৌসুমে কর্মহীন কৃষক ও জেলেদের মাছ ধরার প্রধান বাহন এ নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অসংখ্য কাঠমিস্ত্রি। অন্যদিকে মহাজনরা দু’পয়সা রোজগার করতে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কাঠ সংগ্রহ করে বর্ষাকে ঘিরে অপেক্ষায় থাকে নৌকা বিক্রির পসড়া সাজাতে।

ডিঙি নৌকা কিনতে আসা তাড়াশ উপজেলার কামারসনের রুবেল ও নাদোসৈয়দপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, তারা বিলপাড়ের কৃষিজীবি মানুষ। বর্ষা মৌসুমে তাদের হাতে কাজ থাকে না। আবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়ত করতে হয় নৌকায়। মাছ ধরে বাড়তি আয় ও পারাপারের জন্যই তারা ডিঙি নৌকা কিনতে এসেছেন। তবে গত বছরে তুলনায় এবার নৌকার দাম একটু বেশি।

চাঁচকৈড় হাটের ডিঙি নৌকা তৈরির কারিগর মইনুল মৃধা, রবিউল ও আলাউদ্দিন বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকার কদর থাকায় নৌকা তৈরী করে চলে তাদের সংসার। কাঠ ও প্লেনসিটের নৌকার দাম আকার ভেদে কম-বেশি হয়ে থাকে বলে জানান তারা। ১০ থেকে ১২ হাতের ছোট নৌকা প্রতিটি তৈরি করতে খরচ হয় ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা এবং ১২ থেকে ১৫ হাতের বড় ডিঙ্গি নৌকা তৈরিতে খরচ হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। নৌকা প্রতি ৫শ থেকে ৮শ টাকা লাভ হয় বলে জানান তারা। বিক্রি হয় আকার ভেদে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকায়।

চাঁচকৈড় হাটের নৌকা ব্যবসায়ী শিবলু ফকির ও মহাতাব সরকার জানান, চলতি বছর বন্যার পানি বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো চলনবিলেও আগাম পানি ঢুকেছে। এতে নৌকার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন। গত বছরের তুলনায় শ্রমিক, কাঠ ও নৌকা তৈরীর সরঞ্জামের দাম একটু বেশি। এ কারণে নৌকাও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

an.br

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *