বৃহঃ. এপ্রি ২৫, ২০২৪

 

 

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

বলেশ্বর নদীতে ফেরী উদ্বোধনে করলেন এ্যাড মিলন এমপি দক্ষিণাঞ্চলের  অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ।

উত্তাল বলেশ্বর নদীতে রায়েন্দামাছুয়া নৌরুটে ফেরি চালুর মধ্য দিয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ঘাটে বাগেরহাট আসনের সংসদ সদস্য ও কেদ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাড আমিরুল আলম মিলন পিরোজপুর আসনের সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এই ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এ সময় বাহগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত, শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান মিলন উপস্থিত ছিলেন। ফেরি উদ্বোধন দেখতে দুইপাড়ে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।এদিকে শরণখোলা ও মঠবাড়িয়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ফেরি চালুর খবরে আনন্দে ভাসছেন এই অঞ্চলের মানুষ। ফেরি চালুর ফলে দুই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রার সঙ্গে সড়কপথে দূরত্ব কমেছে ৭০ কিলোমিটার। ফলে বাঁচবে সময় ও অর্থ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর লাখো মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এ ফেরি সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।ফেরি উদ্বোধনী ট্রিপের চালক আব্দুর রউফ বলেন, এই ট্রিপের মাধ্যমে আমি ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। মাছুয়া থেকে রায়েন্দা ঘাটে ভিড়তে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে আমাদের। অন্যান্য সময় হয়তো ৪০ থেকে ৫০ মিনিট লাগতে পারে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নে বাড়ি মালতি রায়ের। থাকেন বাগেরহাটের শরণখোলায়। তিনি বলেন, স্বামীর চাকরির সুবাদে শরণখোলায় থাকতে হয় আমাদের। এতো কাছে নিজেদের বাড়ি থাকলেও সহজে যেতে পারিনা। কারণ এত বড় নদী ট্রলারে পাড়ি দিতে ভয় লাগে। এখন ফেরি হওয়াতে খুব সহজেই নিয়মিত বাড়ি যেতে পারব। আমরা খুব খুশি।
একই উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের ওসমান, মাধুরী রানী, চুন্নু মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি ফেরির। কারণ খেয়া বা ট্রলারযোগে উত্তাল এই নদী পাড়ি দিতে আমাদের নানা সমস্যা হতো। অবশেষে ফেরি চালু হওয়াতে বাস, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, অটো, ভ্যান-রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। আমাদের অনেক সুবিধা হবে। সহজে মঠবাড়িয়া থেকে রায়েন্দা, বাগেরহাট, খুলনা-ঢাকা যেতে পারব।
রায়েন্দা এলাকার ডালিম, ইসলামাইল হোসেন, ঝর্ণা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, ফেরি চালু হওয়াতে আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, তুষখালি, ইন্দুরকানি, বরগুনার পাথরঘাটাসহ পুরো বরিশালের সাথে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। আগে খেয়ায় অনেক টাকা ভাড়া দেওয়া লাগত, আবার গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ও লাগত বেশি। এছাড়া উত্তাল বলেশ্বরে ট্রলারে যেতে ঝুঁকিও ছিল অনেক। এখন আমরা নিরাপদে, কম খরচে যাতায়াত করতে পারবো।এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী ইমন ব্যাপারী বলেন, মঠবাড়িয়ায় আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই আমরা যেতে-আসতে পারিনা। কারণ আসতে-যেতে অনেক টাকা খরচ হয়। ফেরি চালু হওয়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় দারুণ পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক সম্পর্কসহ নানা কারণে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার সাথে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এই যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিল বলেশ্বর নদী। বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় এই এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার একটা বড় অংশের সাথে বাগেরহাটের মানুষের যোগাযোগের জন্য বলেশ্বর রায়েন্দা-বড়মাছুয়া খেয়া ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি পায়রা থেকে মোংলা বন্দরের মধ্যে নতুন যোগাযোগ স্থাপন হবে। বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষ স্বল্প সময় এবং অল্প ব্যয়ে তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। ফেরির সুবিধা থাকাতে দুই পাড়ের মানুষের জন্য যাত্রীবাহী গণপরিবহনও চালু হবে বলে জানান তিনি।বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন বলেন, অবস্থানগত কারণে বাগেরহাট এবং পিরোজপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো একটি ফেরির। অবশেষে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছেবলেশ্বর নদীতে ফেরী উদ্বোধনে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ফেরি চালুর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এই জনপ্রতিনিধি।

 

 

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *