নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে, ৩৬০০ জনকে সহায়তা করোনাকালীন দুর্যোগে মানুষের কল্যাণে কাজ করছে ফেইসবুক গ্রুপ ‘‘প্রাণের বাগেরহাট’’
বাগেরহাটে করোনার সংক্রমণে কর্মহীন হয়ে পড়া নানা শ্রেণি পেশার মানুষদের মানবিক সাহায্যের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘প্রাণের বাগেরহাট’’। করোনার প্রথম ঢেউয়ের শুরুতে কয়েকজন তরুণের উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আতœপ্রকাশ ঘটে ‘‘প্রাণের বাগেরহাট’’ নামে এই ফেইসবুক গ্রুপের। ওই ফেইসবুক গ্রুপটি পরিচিতি পায় সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে। গত এক বছরে এই ফেইসবুক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছাড়ায় লাখের উপরে। এই গ্রুপে বাগেরহাটের দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা মানুষদের সহযোগিতায় নিয়ে নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এই সংগঠনটি কারও নাম পরিচয় প্রকাশ না করে গত এক বছরে বেসরকারি স্কুল ও কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারি, পোষাক শ্রমিক, নরসুন্দর, রিক্সচালকসহ নিন্ম ও মধ্যবিত্ত সাড়ে তিন হাজারের অধিক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।
বাগেরহাট রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সদস্য মীর জায়েসী আশরাফী জেমস বলেন, বাগেরহাটের কিছু তরুণরা প্রাণের বাগেরহাট নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলে। তারা সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য, চিকিৎসা ও অক্সিজেন সেবা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। একটা সেচ্ছাসেবী সংগঠন এভাবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাগেরহাটবাসী পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাই। তাদের এই কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে সেই প্রত্যাশা করছি।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, প্রাণের বাগেরহাট একটি ভার্চুয়াল সংগঠন। এটি ফেইসবুক গ্রুপ। এর সদস্য সংখ্যা এক লক্ষাধিক। এই গ্রুপের অনেকেই অনেককে চিনেনা। এই না না দেখা সম্মিলিত শক্তিটির ছোট একটি প্রকাশ আজকের এই অনুষ্ঠান। করোনার শুরুতেই প্রচারণাসহ নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। দেশে বিদেশের থাকা না প্রান্তের মানুষ এই গ্রুপটিকে বিশ^াস করে সামর্থ্য অনুযায়ি যে যার মত সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। তাই দিয়ে তারা নানা শ্রেণিপেশার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মত এই মেধা শ্রম ও মানসিকতা নিয়ে সমাজের অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান এই সামাজিক নেতা।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রাণের বাগেরহাটে চিফ অ্যাডমিন শাওন পারভেজ বলেন, দেশে যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন কয়েকজন বন্ধু মিলে চিন্তা করি বাগেরহাটের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াব। সেই চিন্তা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক গ্রুপ তৈরি করি। যার নামকরণ করা হয় প্রাণের বাগেরহাট। গ্রুপ চালু হওয়ার পর থেকে বাগেরহাটের সাধারণ এই গ্রুপের সাথে জয়েন্ট হতে থাকে। এই গ্রুপের সদস্যদের কাছে আমরা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফান্ডের দাবি জানানো হয়। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বাগেরহাটের অসংখ্য মানুষ টাকা ও পন্য সহযোগিতা পাঠাতে শুরু করেন। সেই টাকা পন্য এক জায়গায় করে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করি। গত এক বছরের বেশি সময়ে তিন হাজার ৬৫০টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে প্রতিদিন দরিদ্র আড়াই শিশুকে পুষ্টিকর খাবার রান্না করে সরবরাহ করেছি। এছাড়াও রক্তদান, চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনার সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় নতুন করে অক্সিজেন সেবা চালু করি। আমরা মুমুর্যরোগীদের বাড়িবাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছি। কারও অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। এভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, এক বছরের একটু বেশি সময়ের মধ্যে একটি ফেইসবুক গ্রুপ আপামর জন সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে এটি নি:সন্দেহে বড় সাফল্য। তাদের এই গ্রুপের নামটি প্রাণের বাগেরহাট। নামের মধ্যেই প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এই গ্রুপটির যখন থেকে খোঁজ পেয়েছি তখন থেকে ফলো করছি। সেই থেকে দেখছি গ্রুপটি বাগেরহাটের ইতিবাচক জনস্বার্থ যত বিষয় রয়েছে জনদুর্ভোগ, রাস্তাঘাট সমালোচনা নয়, সমস্যার সমাধান চেয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে পজেটিভলি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাদের তুলে ধরা ওই সব বিষয় প্রশাসন ও জনপ্রনিধিরা তা তড়িৎ গতিতে সমাধান করেছে। প্রাণের বাগেরহাট নামের এই সংগঠনটিকে সেচ্ছায় অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তা দিয়ে তারা করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ, নানা শ্রেণিপেশার মানুষদের মানবিক খাদ্য সহায়তাসহ নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। প্রাণের বাগেরহাটসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনাকালীন সময়ে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সারা দেশের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, প্রাণের বাগেরহাট নামের এই সংগঠনটির নামের মধ্যেই এক ধরনের ভালবাসা বা দরদ ছুঁয়ে যায়। দেশবিদেশের মানুষ প্রাণের বাগেরহাটের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তাদের চলা কর্মকান্ডই বলে দেয় তাদের নামকরণের স্বার্থকতা। আমরা দেখেছি বাগেরহাটের মানুষের বিভিন্ন দু:খ, দুর্দশার, অবকাঠামো, উন্নয়ন সমস্যার কথা প্রকাশ করে তা সমাধানের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা বাগেরহাটবাসীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি করোনার সময়ে রোগীদের অক্সিজেন, পরীক্ষা সেবাসহ করোনাকালীন সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ, যেসব মধ্যবিত্তরা মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারেনা তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া। তাদের এসব কাজ আমাকে আনন্দ দিয়েছে। তারা সব সময় প্রশাসনের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আগামীতেও বাগেরহাটের প্রতিটি সমস্যায় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন এই কর্মকর্তা।