বৃহঃ. মার্চ ২৮, ২০২৪

 

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

বাগেরহাটের ফকিরহাটে অর্গানিক বেতাগায় ২০একর জমিতে ৪০জন চাষি খিরাই চাষ করে আগের তুলনায় অনেক লাভবান হয়েছেন। খিরাই চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে খুশির হাঁসি ফুটে উঠতে শুরু করেছে। কীটনাশক মুক্ত পদ্ধতিতে কোন প্রকার কেমিক্যাল ছাড়াই খিরাই চাষ করায় বাজারে তার চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানা প্রকার সহযোগীতা করায় তাদের ক্ষেতে বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখলে এ অঞ্চলে খিরাই চাষ উত্তর উত্তর আরো বেড়ে যাওয়ায় আশংকা করছেন চাষিরা।

অর্গানিক বেতাগার খিরাই চাষি দেবাতুষ কুমার দাশ বলেন, তিনি গত কয়েক বছর আগে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নানা প্রকার সবজি চাষের উপর প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এর পর সেখান থেকে বীজ নিয়ে প্রথম বছর খিরাই চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর ফলন তেমন একটা ভাল না হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এর পর তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে চলতি বছর আবারও নতুন করে খিরাই এর চাষ শুরু করেন। প্রথম দিকে গাছের চেহারা তেমন একটা ভাল না হওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু স্থানীয় উপ-সহকারীর পরামর্শে তার ক্ষেতে ভাল ফলন দেখা দিয়েছে। তিনি দুই বিঘা জমিতে খিরাই চাষ করেছেন। ফলন যা হয়েছে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ভাল। তিনি আরো বলেন, একদিন বাদে একদিন অন্তরপর ১০/১৫মন খিরাই তুলছেন ক্ষেত থেকে। বাজারে বর্তমানে তিনি পাইকারী ২৫টাকা দর মূলে তা বিক্রয় করছেন। তার খিরাই খুলনা রাজশাহী চট্টগ্রাম এমন কি রাজধানী ঢাকায়ও বিক্রয় হচ্ছে। কোন প্রকার কেমিক্যাল ছাড়াই ও কিটনাশক মুক্ত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় বাজারে এই খিরাই এর চাহিদা অনেক গুন বেড়ে গেছে। এই একই বিলের মনোতোষ কুমার দাশ বলেন, কৃষি বিভাগ হতে বীজ জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ প্রদান করেছেন। যাহাতে বিষাক্ত পোকা-মাকড় খিরাই গাছে লাগতে না পারে। তিনি ১২কাটা জমিতে খিরাই চাষ করেছেন। এছাড়া অসিত কুমার দাশ (মেম্বর) দুই বিঘা, তরিকুল ইসলাম ১৬কাটা, শহীদুল ইসলাম ১০কাটা, তপন কুমার দাশ এক বিঘা, সুধাশু কুমার দাশ ১০কাটা, শেখ দেলোয়ার হোসেন ১০কাটা, কৃষ্ণ কুমার দাশ ১০কাটা, পরেশ কুমার দাশ ১০কাটা, হারাধন দাশ ৫কাটা, আউব আলী ১৫কাটা ও তনয় কুমার দাশ ৫কাটা সহ বিভিন্ন চাষি প্রায় ২০একর জমিতে খিরাই এর চাষ করেছেন।

চাষিরা বলেন, স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় তারা খিরাই চাষ করে থাকেন। মাত্র তিন মাসে খিরাই গাছে ফলন ধরে। বাজারে এর চাহিদাও অনেক বেশি তাই তারা লাভবান হওয়ার জন্য খিরাই চাষে আগ্রহী হয়ে থাকেন।

পাইকারী বিক্রেতা হরিপদ কুমার দাশ বলেন, তিনি প্রায় দিনই অর্গানিক বেতাগার খিরাই সহ নানা প্রকার সবজি জাতীয় পণ্য ক্রয় করে খুলনা বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ সহ বিভিন্ন মোকামে পাইকারী দরে বিক্রয় করে থাকেন। জৈব সার দিয়ে উৎপাদন ও রাসায়নিক সার ছাড়াই খিরাই চাষ করা হয়েছে, শুনে অধিকাংশ ক্রেতা আগ্রহ প্রকাশ করে ক্রয় করেন। আর এর চাহিদা সব মোকাম বা বাজারে অনেক বেশি। বেতাগা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস আলী শেখ বলেন,আমরা অর্গানিক বেতাগায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করনের জন্য অর্গানিক পল্লী গড়ে ছিলাম। কিন্তু মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার সম্প্রসারণ করার কারনে অনেকটা জমি বেহাত হয়ে গেছে। তার পরেও যে টুকু আছে সেখানেই আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার চেষ্টা করছি।

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রদীপ কুমার মন্ডল ও উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ নাছরুল মিল্লাত বলেন, আমরা কৃষি অফিস থেকে খিরাই চাষিদের জন্য জৈব সার ফেরোমন ফাঁদ ও চাষিদের আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করেছি। শুধু তাই নয়, আমাদের একজন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সার্বক্ষনিক চাষিদের পাশে থেকে পরামর্শ প্রদান করেছেন। যে কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন বাম্পার হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও অগার্নিক বেতাগার প্রতিষ্টাতা স্বপন দাশ বলেন, আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণের জন্য অর্গানিক বেতাগা প্রতিষ্টা করেছি। সে অনুযায়ী কৃষকরা নানা প্রকার সবজি উৎপাদন করছে কীটনাশক ছাড়াই। আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে কৃষকদের উৎসাহ যোগাচ্ছি। আর তারাও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

bg.n

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *